ভূমিকা :
আল্লাহ তা’আলা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। আর ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হচ্ছে নামাজ বা সালাত । কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম আল্লাহ তা’আলা নামাজের হিসাব নিবেন। নামাজ একটি ফরজ (আবশ্যিক) ইবাদত।
রাসূল সা. বলেছেন, ৫ ওয়াক্ত নামাজ যারা সুন্দরভাবে আদায় করে আল্লাহ তা’আলা তাকে ৫টি বিশেষ পুরুস্কার দান করে সম্মানিত করবেন-
(১) তার থেকে মৃত্যুও কষ্ট দূর করে দিবেন।
(২) কবরের শাস্তি থেকে তাকে মাফ করে দিবেন।
(৩) কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তাকে ডান হাতে আমালনামা দান করবেন।
(৪) তড়িত গতিতে ফুলসিরাত পার করবেন।
(৫) বিনা হিসাবে জান্নাত দান করবেন ।
অতএব সঠিকভাবে নামাজ কিভাবে পড়তে হয় তা শিখে নেওয়া জরুরী । রাসূল (সা.)-কে আল্লাহ তা’আলা জিব্রাইল (আ.)-এর মাধ্যমে নামাজ শিক্ষা দিয়েছেন।
দৈনন্দি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ ।
(১) ফজর – দুই রকাত ফরজ।
(২) জোহর – চার রাকাত ফরজ। (শুক্রবার জোহরের পরিবর্তে জুমার দুই রাত ফরজ পড়তে হয়)
(৩) আছর – চার রাকাত ফরজ।
(৪) মাগরিব – তিন রাকাত ফরজ।
(৫) এশা – চার রাকাত ফরজ ।
সুন্নত ও ওয়াজিব নামাজ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হয়েছে।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় কখন শুরু হয় আর কখন শেষ হয়, হাদীসে পাকে তার সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা এসেছে। এসকল হাদীসের আলোকে বর্তমানে পৃথিবীর প্রত্যেক দেশেই নামাজের সময় সূচীর চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার তৈরী হয়েছে । পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় কখন শুরু হয় আর কখন শেষ হয় এসকল ক্যালেন্ডার থেকে আমরা যেনে নিতে পারি ।
পবিত্রতা অর্জ করে নামাজের নিয়্যত করবে। আপনি কোন নামাজ পড়ছেন মনে মনে এতটুকু থাকাই নিয়্যতের জন্য যথেষ্ট। তবে তার সাথে মুখে উচ্চারণ করা উত্তম। তারপর ক্বিবলামুখি হয়ে দাড়াবে, দুই পায়ের গুড়ালি বরাবর থাকবে এবং দুই পায়ের মাঝে চার আংগুল পরিমাণ ফাকা থাকবে। তারপর তাকবীরে তাহ্রীমা অর্থাৎ الله اڪبر (আল্লাহু আকবার) বলে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠাবে।, এ ক্ষেত্রে হাতের আংগুলগুলো সাভাবিক অবস্থায় ক্বিবলা মুখি থাকবে আর উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি উভয় কানের লতি বরাবর থাকবে। তারপর হাত নামিয়ে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠা অঙ্গুলি দ্বরা হালকা বানিয়ে বাম হাতের কবজি ধরবে আর বাকী আঙ্গুলগুলো বাম হাতের উপর রাখবে। অতঃপর নাভির নিচে বাধবে। দাড়ানো অবস্থায় দৃষ্টি থাকবে সেজদার জায়গায় ।
তারপর ছানা পড়বে
سبحانڪ اللهم وبحمدڪ وتبارڪ السمڪ وتعالى جدڪ ولا اله غي
উচ্চারণঃ
সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তা‘আলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।
অর্থঃ
হে আল্লাহ! আপনার পবিত্রতা এবং প্রশংসা বর্ণনা করছি : আপনার নাম বড়ই মহান। আপনার মাহাত্ম্য ও সম্মান অতীব উচ্চ এবং আপনি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, যার সামনে মাথা নত করা যায়।
তারপর
اعوذ بالله من الشيطن الرجيم
উচ্চারণঃ
আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজীম।
অর্থঃ
বিতারিত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই
তারপর
بسم الله الرحمن الرحيم
উচ্চারণঃ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
অর্থঃ
পরম করুনাময় দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
তারপর
সূরা ফাতেহা
الحمد لله رب العلمين الرحمن الرحيم مالڪ يوم الدين اياڪ نعبد و اياڪ نستعين اهدنا الصراط المستقيم صراط الذين انعمت عليهم غيرالمغصوب غليهم و لا الضلين পড়বে।
উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন আররহমানির রহীম মালিকি ইয়াওমিদ্দিন, ইয়্যাকানা’বুদু অইয়্যাকানাসতাইন। ইহদিনাছছিরতল মুসতাকীম। ছিরতল্লাযিনা আনআ’মতা আলাইহিম গইরিল মাগধুবি আলাইহিম। অলাদ্দল্লিন।
অর্থঃ
(১) যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালন কর্তা।
(২) যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু।
(৩) যিনি বিচার দিনের মালিক।
(৪) আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র সাহায্য প্রার্থনা করি।
(৫) আমাদেরকে সরল পথ দেখাও।
(৬) সে সমস্ত লোকদের পথ যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ।
(৭) তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং পথভ্রষ্ট হয়েছে।
তারপর
কোআনে কারীম থেকে যে কোন একটি সূরা মিলাবে।
যেমন ফীল।
الم تر ڪيف فعل ربڪ باصحب الفيل الم يجعل ڪيد هم في تضليل و ارسل عليهم طيرا ابابيل ترميهم بحجارة من سجيل فجعلهم ڪعصف مآ ڪول
উচ্চারণঃ
আলাম তারা কাইফা ফা‘আলা রাব্বুকা বিআসহা-বিল ফীল। আলাম ইয়াজ‘আল কাইদাহুম ফী তাদলীল। ওয়া আরছালা ‘আলাইহিম তাইরান আবা-বীল। তারমীহিম বিহিজা-রাতিম মিন ছিজ্জীল। ফাজা‘আলাহুম কা‘আসফিম মা’কূল।
অর্থঃ
(১) আপনি কি দেখেননি আপনার পালনকর্তা হস্তীবাহিনীর সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন ?
(২) তিনি কি তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেননি ?
(৩) তিনি তাদের উপর প্রেরণ করেছেন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখী,
(৪) যারা তাদের উপর পাথরের কংকর নিক্ষেপ করেছিল।
(৫) অতঃপর তিনি তাদেরকে ভক্ষিত তৃণসদৃশ করে দেন।
তারপর
তাকবীর বলে রুকুতে যাবে, হাতের আংগুলগুলো ফাকা রেখে দুই হাত দ্বারা উভয় হাটুকে ভালভাবে আকড়ে ধরবে। এবং মাথা, পিঠ ও মাজা সমান থাকবে কোন উঁচু নিচু থাকবে না। রুকুতে থাকা অবস্থায় দৃষ্টি থাকবে পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির দিকে।
তারপর রুকুর তাসবীহ পড়বে।
سبحان ربي العظيم
উচ্চারণঃ
সুবহানা রাব্বিয়াল আজীম ।
অর্থঃ
আমি আমার মহান প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করছি।
এছাড়াও পড়া যায়-
سُبْحَنَاكَ اَللّٰهُمَّ رَبَّناَ وَبِحَمْدِكَ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْلِي
উচ্চারণঃ
সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়াবিহামদিকা আল্লাহুম্মাগ-ফিরলী।
অর্থঃ
হে আল্লাহ তুমি পাক পবিত্র, হে আমাদের রব তোমার প্রশংসা সহকারে ফরিয়াদ করছি! তুমি আমাকে মাফ কর।
৩ বার পড়বে। তবে ৫ বার , ৭ বারও পড়তে পারবে।
তারপর
سمع الله لمن حمده
উচ্চারণঃ
সামিআল্লাহু লিমান হামিদা ।
বলে রুকু থেকে সোজা হয়ে দাড়াবে।
অর্থঃ
আল্লাহ তায়ালা প্রশংসাকারীর প্রশংসা শোনেন। )
তারপর
উচ্চারণঃ
রাব্বানা লাকাল হামদ, হামদান কাছিরান, তাইয়্যেবান, মোবারাকান ফীহি’।
অর্থঃ
হে আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা তোমার জন্য, এমন ব্যাপক প্রশংসা, যাতে রয়েছে খুবই উত্তম বরকত। এ প্রশংসায় মঙ্গল হোক, বরকত হোক।
তারপর
الله اڪبر (আল্লাহু আকবার) বলে সেজদায় যাবে । সেজদায় যাওয়ার সময় দুই হাতে হাটু ধরে সর্বপ্রথম উভয় হাটু একত্রে জমীনে রাখবে। তারপর হাতের আঙ্গুলগুলো মিলানো অবস্থায় দুই হাত জমীনে একত্রে রাখবে। এবং চেহারার চওড়া অনুযায়ী দুই হাতের মাঝে ফাঁকা রাখবে।তারপর দুই হাতের মাঝে সেজদা করবে প্রথমে নাক তারপর কপাল রাখবে উভয় হাতের শধ্যখানে বৃদ্ধ আঙ্গুলদ্বয়ের বরাবরে নাক রাখবে । নজর নাকের উপর রাখবে । পুরুষের পেট রান থেকে বাহু পাজর থেকে হাতের কনুই জমীন থেকে পৃথক রাখবে। পায়ের আঙ্গুল সমূহকে কিবলামুখী করে রাখবে এবং দুই পায়ে গুড়ালি মিলিয়ে না রেখে বরং টাকনু কাছা কাছি রাখবে। যথা সম্ভব পায়ের আঙ্গুলগুলো জমীনের সাথে চেপে ধরে আঙ্গুলের অগ্রভাগ ক্বিবলার দিকে রাখবে। সেজদার মধ্যে ৩ বার سبحان ربي الاعلى (সুবহানা রব্বিয়াল আয়লাপড়বে)। তবে ৫ বার , ৭ বারও পড়তে পারবে।
(উচ্চারণঃ সুবহানা রব্বিয়াল আয়লা । অর্থঃ আমার মহান প্রতিপালক মহা পবিত্র।) তিনবার সাতবারও পড়তে পারবে।
তারপর
الله اڪبر (আল্লাহু আকবার) বলে সেজদা থেকে উঠে বসবে। প্রথম কপাল তারপর নাক তারপর হাত উঠাবে। তারপর বাম পা জমীনে বিছিয়ে তার উপর বসবে। আর ডান পা দার করিয়ে রাখবে । পায়ের আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী করে জমীনে রাখবে। দুই হাত উভয় রানের উপর রাখবে। হাতের আঙ্গুলগুলো সামান্য ফাঁকা রেখে আঙ্গুলের মাথার অগ্রভাগ হাটুর কিনারা বরাবর রাখবে। তারপর اللهم اغفرلى ارحمني وارزقني واهدنى পড়বে। তারপর الله اڪبر (আল্লাহু আকবার) বলে দ্বিতীয় সেজদা করবে। দ্বিতীয় সেজদা শেষ করে আবার الله اڪبر (আল্লাহু আকবার) বলে সেজদা থেকে সোজা দাড়িয়ে যাবে।
তারপর দ্বিতীয় রাকাতেও ঠিক প্রথম রাকাতের মতই ।
তারপর প্রথম রাকাতের মতই রুকু সেজদা করবে। দুটি সেজদা শেষ করে দুই সেজদার মাঝে বসার ন্যায় বসবে এবং দুই হাত রানের উপর হাটু বরারব রাখবে । আর দৃষ্টি থাকবে কোলের দিকে।
তারপর
তাশাহ্হুদ পড়বে।
التحيات لله و الصلوات والطيبات السلام عليڪ ايها النبي ورحمة الله وبرڪاته السلام علينا وعلي عباد الله الصلحين اشهد الا اله الا الله واشهد ان محمدا عبده ورسوله
উচ্চারণঃ আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি অছ্ছলাওয়াতু অত্তয়্যিাবাতু আস্সালা মু আলাইকা আইয়ুহান্নাবিয়্যু অরহমাতুল্লাহি অবারকাতুহু আস্সালামু আলানা অআলা ইবাদিল্লাহিছ্ছলিহীন আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাহু অ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু অরসূলুহু।
অর্থঃ “মৌখিকভাবে পেশকৃত যাবতীয় সম্মান ও অভিবাদন, শরীরিক ও আর্থিক সকল ইবাদত আল্লাহ তা‘আলার জন্য নিবেদিত । হে নবী! আপনার প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি রহমত ও বর্কত বর্ষিত হোক। শান্তি আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর সকল নেক বান্দার প্রতি বর্ষিত হোক । আমি সাক্ষ দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই এবং এও সাক্ষ দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সা. আল্লাহর বান্দা ও রাসূল ।”
তাশাহ্হুদ পড়ার সময় ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও মধ্যমা অঙ্গুলি দ্বারা হালকা বানাবে এবং اشهد الا اله বলার সময় শাহাদাত অঙ্গুলি উঠাবে الا الله বলার সময় নামিয়ে ফেলবে। বাকী দুটি আঙ্গুল তালুর সাথে মিলিয়ে রাখবে।
নামাজ যদি দুই রাকাত বিশিষ্ট হয়, তাহলে তাশাহ্হুদের পরে দুরুদে ইব্রাহীম পড়বে।
اللهم صل علي محمد و علي ال محمد ڪما صليت علي ابراهيم و علي ال ابراهيم انڪ حميد مجيج اللهم بارڪ محمد و علي ال محمد ڪما بارڪت علي ابراهيم ر علي ال ابراهيم انڪ حميد مجيد
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ অ আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা অ আলা আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিউ অ আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারকতা আলা ইব্রাহীমা অ আলা আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।
অর্থঃ হে আল্লাহ শান্তি বর্ষণ কর মুহাম্মদ সা. এর উপর এবং মুহাম্মদ সা. এর পরিবার বর্গের উপর । যেমনি ভাবে শান্তি বর্ষণ করেছ ইব্রাহীম আ. এর উপর এবং ইব্রাহীম আ. এর পরিবার বর্গের উপর। নিশ্চই তুমি প্রশংসিত ও হে আল্লাহ বরকত দান কর মুহাম্মদ সা. এর উপর এবং মুহাম্মদ সা. এর পরিবার পরিজনের উপর। যেমনি বরকত দান করেছ ইব্রাহীম আ. এর উপর এবং ইব্রাহীম আ. এর পরিবার পরিজনের উপর। নিশ্চই তুমি প্রশংসিত।
তারপর
দোয়ায়ে মাছুরা পড়বে।
اللهم اني ظلمت نفسي ظلما ڪثيرا و لا يغفر الذنوب الا انت فاغفرلي مغفرة من عندڪ انڪ انت الغفور الرحيم
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী জালামতু নাফসী জুলমান কাসীরাওঁ ওয়া লা-ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আনতা, ফাগফিরলী, মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা, ওয়ারহামনী ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহীম।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আমার আত্মার উপর বড়ই অত্যাচার করেছি এবং তুমি ভিন্ন কেউই পাপসমূহ ক্ষমা করতে পারে না। অতএব তুমি নিজ হাতে আমাকে ক্ষমা করো এবং আমার উপর রহমত (করুণা) বর্ষণ করো। নিশ্চয়ই তুমি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।
তারপর
السلام عليڪم ورحمة الله ( আস্সালামু আলাইকুম অরহমাতুল্লাহ) বলে সালাম ফিরাবে । প্রথমে ডান পাশে তারপর বাম পাশে। সালাম ফিরানোর সময় দৃষ্টি থাকবে কাঁেধর দিকে ডান পাশে সালাম ফিরানোর সময় ডন কাঁধের দিকে আর বাম পাশে ফিরানোর বাম কাঁধের দিকে। ডান পাশে সালাম ফিরানোর সময় সালামের দ্বারা নিয়্যত থাকবে ডান পাশের ফেরেশÍাদের আর বাম পাশে সালাম ফিরানোর সময় নিয়্যত থাকবে বামপাশের ফেরেশÍাদের ।
আর যদি তিন রাকাত বিশিষ্ট নামাজ হয়, তাহলে দুই রাকাতের পর যে বৈঠক হবে তাহবে প্রথম বৈঠক। এই প্রথম বৈঠকে শুধু তাশাহ্হুদ পড়ে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাড়িয়ে যাবে আর তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়বে কিন্তু কোন সূরা মিলাবে না। তৃতীয় রাকাত শেষ করে তাশাহ্হুদ, দুরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাছুরা পরে সালাম ফিরাবে।
নামাজ যদি চার রাকাত বিশিষ্ট হয়, তাহলে প্রথম বৈঠকে শুধু তাশাহ্হুদ পড়বে তারপর আরো দুই রাকাত পড়বে।আর এই দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতেহা পড়বে, কোন সূরা মিলাবে না। চতুর্থ রাকাতের পরে শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ, দুরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাছুরা পড়ে সালাম ফিরাবে।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সুন্নত নামাজ
(১) ফজরের ফরযের পূর্বে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
(২) জোহরের ফরযের আগে চার রাকাত ও ফরযের পরে দুই রাকাত নামাজআদায় করা সুন্নত।
(৩) জুমার ফরযের আগে চার রাকাত ও ফরযের পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
(৪) মাগরিবের ফরযের পরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
(৫) এশার ফরযের পরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
এসকল সুন্নত নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলা হয়। কোন ধরনের ওযর ছাড়া এসুন্নতগুলো তরক কারী গুনাহগার হবে।
সুন্নত নামাজ পড়ার নিয়ম
সুন্নত নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতেহার পর সূরা মিলাতে হবে আর বাকী সকল নিয়ম অন্যান্য নামাজের মতই। সুন্নত নামাজ যদি সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা ও নফল হয় এবং চার রাকাত বিশিষ্ট হয় , তাহলে দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহ্হুদের পরে দুরুদ শরীফ ও দু‘আয়ে মাছুরা পড়াও উত্তম ।
জামা আতের সাথে নামাজ আদায় করলে মুক্তাদিগনের করণীয়
ইমামের পেছনে যারা ইক্তেদা করে তাদেরকে মুক্তাদি বলে । মুক্তাদিগন ইমামের তাকবীরে তাহরীমা বলার পর তাকবীর বলে কান বরাবর হাত উঠাবে । তারপর হাত বাঁধবে । তারপর ছানা পড়ে চুপ করে ইমাম ক্বেরাত একাগ্র চিত্তে শুনতে থাকবে আর যদি ইমামের ক্বেরাত পড়া স্পষ্ট শোনা না যায় তাহলে আল্লাহ পাকের প্রতি মনোনিবেশ করার চেষ্টা করবে। ইমাম যখন রুকু সেজদার জন্য তাকবীর বলবে মুক্তাদিগনও অনুচ্চ আওয়াজে তাকবীর বলে ইমামসাহেবকে অনুরণ করবে । ইমাম সাহেব যখন সামিআল্লাহুলিমান হামিদাহ বলে রুকু থেকে উঠবে মুক্তাগণ তখন রাব্বানা লাকালহামদু বলে ইমামের পরে রুকু থেকে সুজা হয়ে দাড়াবে
প্রত্যেক রুকু ও সেজদায় মুক্তাদিগণও রুকু-সেজদার তাসবীহ পড়বে । এবং প্রথম বৈঠকে তাশাহ্হুদ পড়বে এবং দ্বিতীয় বৈঠকে তাশাহ্হুদ, দুরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাসুরা পড়বে । তারপর ইমামের সঙ্গে ডানে ও বামে সালাম ফিরাবে।
ওয়াজিব নামাজ
বিতর ও দুই ঈদের নামাজ হলো ওয়াজিব।
বিতরের নামাজ তিন রাকাত। বিতরের নামাজের ওয়াক্ত হলো, এশার নামজ আদায় করার পর থেকে সুবহে সাদেক পর্যন্ত । এ ওয়াক্তের মধ্যে যে কোন সময় বিতরের নামাজ আদায় করতে হবে। যদি শেষ রাতে জাগার অভ্যাস থাকে তাহলে শেষ রাতে বিতরের নামাজ আদায় করা উত্তম । আর জাগ্রত হওয়ার অভ্যাস না থাকলে ঘুমানোর আগেই বিতরের নামাজ আদায় করে নিবে ।
বিতরের নামাজ যেভাবে পড়তে হয়
বিতরের নামাজের তিনো রাকাতে সূরা ফাতেহার পরে সূরা মিলানো ফরজ। আর তৃতীয় রাকাতে ক্বেরাতের পর الله اڪبر বলে কান বরাবর হাত উঠিয়ে আবার নাভীর নিচে হাত বেধে দোয়ায়ে কুনুত পড়বে।
اللهم انا نستعينڪ و نستغفڪ ونؤمن بڪ و نتوڪل عليڪ ونثني عليڪ الخير و نشڪرڪ ولا نڪفرڪ و نخلع ونترڪ من يفجرڪ اللهم اياڪ نعبد ولڪ نصلي و نسجد واليڪ نسعي و نحفد ونرجو رحمتڪ و نخشي عذابڪ ان عذابڪ بالڪفار ملحق
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাইনুকা ,অনাসতাগফিরুকা,অনু-মিনুবিকা, অনাতাঅক্কালু আলাইকা, অনুসনী আলাইকাল খইরা , অনাশকুরুকা , অলানাকফুরুকা, অনাখলা’ ণাতরুকু, মাই ইয়াফ জুরুকা, আল্লাহুম্মা ইয়্যাকানা’বুদু , অলাকানুছল্লি, অনাসজুদু, অইলাইকা নাসআ, অনাহফিদু, অনারজু রহমাতাকা, অনাখশা আযাবাকা, ইন্না আযাবাকা বিলকুফ্ফারি মুলহিক।
অর্থঃ “হে আল্লাহ আমরা আপনার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি । আপনার কাছে হেদায়েত কামনা করছি । আপনার কাছে ক্ষমার আবেদন করছি । আপনার কাছে তওবা করছি । আপনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করছি । আপনার উপর ভরসা করছি । আপনার সকল কল্যাণের প্রশংসা করছি । আমরা আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি । আমরা আপনার অনুগ্রহ অস্বীকার করি না । আমরা পৃথক চলি । এবং পরিত্যাগ করি এমন লোকদের, যারা আপনার বিরুদ্ধাচারণ করে । “হে আল্লাহ ! আমরা আপনারই ইবাদত করি । এবং আপনারই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আমরা নামাজ পড়ি ও সিজদা করি । আপনার প্রতিই আমরা ধাবিত হই এবং আমরা আপনার আযাবকে ভয় করি । নিশ্চাই আপনার প্রকৃত আযাব কাফেরদের উপর পতিত হবে । আল্লাহ তা‘আলা নবী সা.-এর প্রতি ও তার পরিবার পরিকনের প্রতি রহমত বর্ষকরুন এবং তাকে শান্তিতে রাখুন ।
তারপর বিতরের নামাজের বাকী নিয়ম অন্যান্য নামাজের মতই।
দুই ঈদের নামাজ
অন্যান্য নামাজের সাথে ঈদের নামাজের পার্থক্য হলো , দুই রাকাতে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবীর বলতে হয়। প্রথম রাকাতে ছানা পড়ার পর অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর বলবে। প্রত্যেক তাকবীর বলার সময় দুই হাত কান বরাবর উঠিয়ে নাভীর নিচে না বেধে নিচের দিকে ছেড়ে দিবে। তিনটি তাকবীর বলা শেষ হলে নাবীর নিচে হাত বাধবে। আর দ্বিতীয় রাকাতে ক্বেরাতের পর অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর বলবে একই নিয়মে তারপর চতুর্থ তাকবীর বলে রুকুতে যাবে। বাকী সব নিয়ম অন্য নামাজের মতই।
মহিলাদের নামাজ
মহিলাদের নামাজের নিয়ম প্রায় পুরুষের নামাজের মতই। তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্যাবধান আছে তা হলো, দাড়ানো অবস্থায় দুই পা মিলিয়ে রাখবে । তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় মহিলারা কাধ পর্যন্ত হাত উঠাবে। তারপর বুকের উপর হাত বাধবে বাম হাতের পিঠের উপর ডান হাতের তালু রাখবে । রুকুতে পুরুষের মত উভয় হাতে হাটুতে ভাল করে ধরবে না বরং দুই হাতের আংগুল মিলিত রেখে হাটুকে স্পর্স করবে এবং দুই পায়ের টাখনু মিলিয়ে রাখবে । পুরুষের রুকুর মত মাথা পিঠ ও মাজা সমান হবে না । সেজদার মাঝে মহিলারা দুই পা বাম দিক দিয়ে বের করে ডান নিতম্বের উপর বসবে তারপর হাত জমীনে বিছিয়ে সেজদা করবে। পেট রানের সাথে মিলিয়ে বাহু পাজরের সাথে মিলিয়ে এবং হাতের কনুই জমীনের সাথে মিলিয়ে যথা সম্ভব জমীনের সাথে চেপে ধরে সেজদা করবে । বসার সময় দুই পা বাম দিকে বের করে দিয়ে ডান নিতম্বের উপর বসবে। মহিলাদের নামাযের বাকী নিয়ম পুরুষের নামাযের মতই।